চুল পড়া বন্ধ করার কার্যকরী ৩০ টি উপায়
Hairfall Solution: জীবনে সমস্যার শেষ নেই, পুরো জীবনটাই যেন সমস্যায় ভরা। 'কুঁচবরণ কন্যা রে তার মেঘ-বরণ কেশ' এই কথাটা আজ যেন ইতিহাসের রোমন্থন। ইতিহাসের পাতায় যেমন ঐতিহাসিক তথ্য লেখা থাকে, তেমনই এটাও যেন একটা ঐতিহাসিক কথা। জীবনে সমস্যার শেষ নেই আগেই বলেছি, জীবনের অনেক গুলো সমস্যার মধ্যে একটা হল চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা। এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সকলকেই। শুধু আমার আপনার ঘরে নয়, এই সমস্যা প্রত্যেক ঘরেই দেখা যায়। এটা খুবই দুঃখজনক সমস্যা। সৌন্দর্যের মূল চাবি কাঠিই হল চুল, আর সেই চুল যদি মাথায় না থাকে, মাথা থেকে উঠে যায়, তাহলে তো সৌন্দর্যের ব্যাখাই বৃথা। অনেকেই অনেক রকম কিছু ট্রাই করেন, কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়না, অনেক সময় দেখা যায় ভুল ভাল জিনিস ট্রাই করার ফলে চুল গজানোর থেকে চুল ঝড়ে যায়। যা নিয়ে মানুষ আরও বিমর্ষিত হয়ে পড়েন। আজ আপনাদের জন্য এই প্রতিবেদনে নিয়ে এলাম চুল পড়ার সমস্যা সমাধানের উপায়। আশা করি এই উপায় গুলো যদি নিয়মিত লক্ষ্য করেন তাহলে আপনারা উপকার পাবেন।
কী কী কারণে চুল পড়ে?
- প্রথমেই যেটা দেখা যায় সেটা হল বংশগত সমস্যা। আপনার যদি বংশে চুল পড়ার সমস্যা থাকে , তাহলে চুল পড়বে। এই ধরুন আপনার বাবার মাথায় অল্প বয়সেই টাক দেখতে পাওয়া যায়, আপনার দাদুরও মাথায় টাক দেখতে পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে বংশগত সমস্যা।
- হরমোনের কারণেও চুল পড়তে দেখা যায়। এই যেমন গর্ভাবস্থা, প্রসব বা মেনোপজের পর চুল পড়তে দেখা যায়।
- শারীরিক সমস্যা, দুশ্চিন্তা, কঠিন অসুখ থাকলে চুল পড়তে দেখা যায়।
- স্ক্যাল্প অপরিষ্কার থাকলে চুল পড়তে দেখা যায়।
- রাসায়নিক উপাদানযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করলে।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, অনিয়মিত মেনস্ট্রুয়ালের সমস্যা থাকলে চুল রুক্ষ শুষ্ক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়, চুল পাতলা হয়ে গিয়ে চুল পড়ে যায়।
- থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়।
- অ্যানিমিয়ার সমস্যা থাকলে চুল পড়ার সমস্যা দেখা যায়।
- ওজন কমাতে গিয়ে অনেকেই কড়া ডায়েটের মধ্যে থাকেন, আর তাই অনেকসময় দেখা যায় শরীরে যতটুকু প্রোটিন প্রয়োজন, ততটুকু শরীরে প্রবেশ করছেনা। তার ফলেও চুল পড়তে দেখা যায়।
- মাংস এবং ডেয়ারি প্রোডাক্টে ভিটামিন বি১২ থাকে, শরীরে এই জাতীয় খাবারের অভাব থাকলে চুল পড়তে দেখা যায়।
কীভাবে বুঝবেন চুল পড়ছে?
- মাথার ত্বকে খুশকির সমস্যা, ইনফেকশন বেড়ে গিয়েছে, তখনই বুঝতে হবে চুল পড়ার সমস্যায় ভুক্তভোগী।
- মাথার সামনের দিকের ঘনত্ব কমতে থাকলে।
- ভ্রুর চুল কিংবা চোখের পাতা সবজায়গায় চুল পড়তে থাকলে।
- দিনে ১০০ টা চুল পড়া স্বাভাবিক, কিন্তু তার বেশি চুল পড়লেই চিন্তার বিষয়।
ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে চুল পড়ার সমস্যার সমাধান করবেন?
- ১০-১২টা নিম পাতা বেটে নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ অলিভ অয়েল, আমন্ড অয়েল বা নারকেল তেল মিশিয়ে গরম করে স্ক্যাল্পে মাসাজ করুন। এর ফলে চুলের গোড়া শক্ত হবে, চুল বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
- পেঁয়াজ থেকে রস বের করে নিয়ে স্ক্যাল্পে লাগান, চুলের ডগাতে লাগান। লাগানোর সময় হালকা হাতে ম্যাসাজ করুন। এরপর ১ ঘন্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে নিন। পেঁয়াজের রস ব্যবহার করলে স্ক্যাল্পের ইনফেকশন হবেনা।
- ৭ টা জবা ফুল নিয়ে আধ কাপ নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ফুটিয়ে রাখুন। এরপর সেই তেল স্ক্যাল্প এবং চুলে লাগিয়ে নিন। আধঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই তেল খুশকি, শুষ্কতা, থেকে চুলকে রক্ষা করবে, চুলকে ঘন ও মজবুত করবে।
- সপ্তাহে দুবার স্ক্যাল্পে নারকেল তেল ম্যাসাজ করুন কিংবা স্নান করার আগে সারা রাত বা কয়েক ঘণ্টা রেখে তারপর চুলটা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।
- পৃথিবীর সবচেয়ে ঘন তেল নামে পরিচিত যেটি, সেটা হল ক্যাস্টর অয়েল, এতে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন ই এবং অনেক ধরনের মিনারেল । এই তেল শুধু মাখা যায়না, তেলের সাথে অলিভ অয়েল এবং নারকেল তেল মেশাতে হবে।
- তেলের সঙ্গে লেবু মিশিয়ে স্ক্যাল্পে দিন, এটি চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। সরাসরি কখনোই লেবু ব্যবহার করবেননা।
- ২ টো ডিম নিয়ে তাতে ২ টেবিল চামচ দই মেশান, এই প্যাকটি চুল ধোওয়ার ৩০ মিনিট আগে স্ক্যাল্পে লাগান।
- সারারাত মেথি ভিজিয়ে ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন, এরপর এটি সরাসরি মাথায় লাগান, শুকিয়ে গেলে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন।
- চুল শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন, এরপর অ্যালোভেরা জেল লাগান । সপ্তাহে দুই বার এই জেল দিয়ে মালিশ করলে চুল পড়া বন্ধ হবে।
- ফুটন্ত জলে গ্রিন টী এর লিকার বানিয়ে মাথার চুলে ঢালুন, এরপর ঘন্টা খানেক রেখে ম্যাসেজ করুন। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। এতে চুল পড়া কমবে।
- এক চামচ আমলার সঙ্গে পাতিলেবুর রস মিশিয়ে মাথায় মেখে নিন, তারপর সারারাত মাথা ঢেকে রাখুন। এরপর সকালে শ্যাম্পু করে নিন।
- হেনার সঙ্গে বিট সিদ্ধ করে মিশিয়ে মাথায় মাখুন। তারপর ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। অন্তত দুবার করুন সপ্তাহে ফল পাওয়া যাবে।
- চুলে নিয়মিত ব্রাশ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে, সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং স্নান করার পর। এছাড়া স্নান করার আগে চুলের নিচে থেকে উপর পর্যন্ত ব্রাশ করে নিন, যাতে জট না থাকে। তিনবার ব্রাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছ ভেজা চুল কখনোই ব্রাশ করবেননা। চুলে রোদ লাগাবেন না। প্রয়োজনে স্কার্ফ বা ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে বাইরে বেড়োন।
- ধূমপান ও মদ্যপানের কারণেও চুল পড়তে দেখা যায়, তাই এগুলো থেকে বিরত থাকুন।
- সপ্তাহে তিন দিনের বেশি শ্যাম্পু করবেন না, এতে চুল নষ্ট হয়ে যায়।
- চুলে গরম তেল ম্যাসাজ করুন।
- আলু পিষে নিয়ে তার থেকে রস বের করে স্ক্যাল্পে লাগান। ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করুন। এটি চুল পড়া রোধ করবে চুল গজাতে সাহায্য করবে।
- আমলা, বাদাম, জলপাই তেল, নারকেল তেল, সরিষা এই তেল গুলো সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন। যা চুলকে শক্তিশালী করবে।
- হেনার পাতা গুঁড়ো করে এবং তাতে দই আর ডিম মিশিয়ে মাথায় মাখুন, এরপর ৩০ মিনিট মাথায় রাখুন। তারপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এক চামচ মধু এবং এক চামচ দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে একটা পেস্ট বানান। এরপর এটি চুলে প্রয়োগ করুন ।
- চুল রঙ করা থেকে বিরত থাকুন।
- স্ট্রেস কমান, ব্যায়াম করুন।
- চুল পড়া রোধ করবে আদার রস। মাথায় আদার রস মাখিয়ে রাখুন ৩০ মিনিট। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন ব্যবহার করতে পারলে উপকার পাওয়া যাবে।
- ডিম-মধু-অলিভ অয়েল একসাথে মিশিয়ে মাথায় মাখুন। তারপর কিছুক্ষণ রেখে শ্যাম্পু করে নিন। চুল ভালো থাকবে।
- পালং শাক, গাজর, ডিম, ওটমিল, আখরোট, ডাল, মুরগির মাংস, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, দই, রাঙা আলু প্রতি দিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন।
- নারকেলের দুধ দিয়ে হেয়ার স্পা করুন। নারকেলের দুধ স্ক্যাল্পে লাগিয়ে তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে নিন এরপর ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
- শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার লাগাতে কখনোই ভুলবেন না।
- খাঁটি নারিকেল তেলের সাথে ভিটামিন ই মিশিয়ে চুলে লাগান। এটি সপ্তাহে দু দিন ব্যবহার করুন।
- স্নানের পর পেয়ারা পাতা সিদ্ধ জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
- থানকুনি পাতার রসের সাথে এক চামচ নারিকেল বা অলিভ অয়েল মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করুন।