মুখের দুর্গন্ধ দূর করার সেরা ৩০ টি উপায়
আপনি যতই স্মার্ট বা সুন্দর হোন না কেন, মুখের দূর্গন্ধের সমস্যা সবকিছুকেই হার মানাবে। অনেকেই মুখের দুর্গন্ধের সমস্যায় ভোগেন। এটা খুবই কষ্টকর সমস্যা। খুবই দুঃখজনক সমস্যা। মুখের দুর্গন্ধের কারণে অনেকেই কথা বলতে গিয়ে দূরে সরে যায় । যা খুবই অপমানজনক। বিভিন্ন টুথপেস্ট ব্যবহার করেও কোনো ফল হচ্ছেনা। দাঁত, দাঁতের গোড়া, মাড়ি, জিভ, মুখগহ্বরের সংক্রমণের কারণে এই দূর্গন্ধ হয়। খাওয়ার পর অনেকেই সময় নিয়ে মুখ ধোয় না উঠে চলে যায় এই কারণেও হয়, আবার অনেক সময় দেখা যায় পর্যাপ্ত জল না খেলেও দেখা যায় এই সমস্যা। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি ফেলিওরের জন্যও দেখা যায় এই সমস্যা। শুধু তাই নয়, পেট বা লিভারের সমস্যা থাকলেও এই সমস্যা দেখা যায়।
কী কী কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়
- ভিটামিন ডির অভাবে এই সমস্যা দেখা দেয়। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি না থাকায় এই সমস্যা দেখা যায়। আসলে খাদ্য উপাদান থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়না, তাই আমাদের শরীরে এর অভাব লক্ষ্য করা যায়।
- ভিটামিন সি শরীরে কম থাকলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়ে। আর এখান থেকেই মুখে সংক্রমণ হতে পারে। লেবু জাতীয় ফল, ব্রকোলি কিংবা বেরি খেলে এর ঘাটতি পূরণ হয়।
- শরীরে আয়রনের অভাব দেখা দিলে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
- দেহে ইনসুলিনের অভাবেও মুখে দূর্গন্ধ হয়।
- সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর যেমন গন্ধ থাকে, সেই গন্ধটা যদি সবসময় অনুভব করেন তাহলে বুঝতে হবে মুখের ভেতর স্যালিভা শুকিয়ে গিয়ে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়েছে।
- শরীরে জিঙ্কের অভাব দেখা দিলে মুখগহ্বরে ব্যাক্টেরিয়া বেড়ে যায়।
- সাইনাসের সমস্যায় নাকে ও গলায় মিউকাস জমে দূর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
- খাবারে প্রোটিনের মাত্রা অতিরিক্ত বেশি থাকলে দূর্গন্ধ হয়।
- কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে নিঃশ্বাসে দূর্গন্ধ হয়, আর তার ফলে মুখেও দূর্গন্ধ হতে দেখা যায়।
- নিঃশ্বাসে পচে যাওয়া মাংসের দুর্গন্ধ পাওয়া গেলে বুঝতে হবে টনসিলের সমস্যা রয়েছে।
- লাং ক্যানসারের কারণেও দূর্গন্ধ হয়।
- যারা নিয়মিত দাঁত মাজেন কিন্তু তাও গন্ধ থেকে যাচ্ছে, তখন বুঝতে হবে লিভার ক্যানসারের কারণে দেখা দিচ্ছে।
- আলসার এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে দূর্গন্ধ হয়।
- খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে, সঠিক পদ্ধতিতে দন্ত পরিচর্যা না করা।
- অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকা।
- দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে যাওয়া, অপরিষ্কার জিভ।
- ডায়াবেটিস, দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের রোগ থাকলে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
- অনেক ওষুধ খাওয়ার ফলে এই সমস্যা হয়।
- মিষ্টি জাতীয় খাবার, চকোলেট, লজেন্স খাওয়ার পর ভালো করে মুখ না ধুলে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
- দাঁতে পাথর হলে দূর্গন্ধ হয়।
কাদের বেশি হয় এই সমস্যা?
যাঁরা নিয়মিত ভাবে, সঠিক পদ্ধতিতে ব্রাশ করেননা, নেশা করা মানুষদের, পেটের গন্ডগোল হওয়া মানুষদের।
মুখের দূর্গন্ধ দূরীকরণের উপায়
- মুখ শুকিয়ে গেলে মুখে দূর্গন্ধ হতে দেখা যায়। তাই জল বেশি করে খেতে হবে, এর ফলে খাবারের কণা এবং অতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে যায়। তাই প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার জল খাওয়া জরুরি।
- ভাজাভুজি,পটাটো চিপস,চিনিযুক্ত স্ন্যাক্স, সফট ড্রিঙ্ক এসব বেশি খাওয়া চলবে না।
- অনেকেই কাঁচা রসুন, কাঁচা পেঁয়াজ খান। এতে গন্ধ বেশি হয়, তাই এসব খাওয়ার পর ভালো করে ব্রাশ করে নিন।
- সুগার ফ্রি মিন্ট,চুইংগাম অথবা লজেন্স খান, যা ব্যকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে।
- ধনেপাতা অথবা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে মুখের দূর্গন্ধ দূর হয়।
- যখন বুঝবেন গ্যাসের সমস্যা থেকে মুখে দূর্গন্ধ হচ্ছে তখন একটা অ্যান্টাসিড চুষে খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
- অত্যধিক ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্যের নেশা থেকে বিরত থাকুন।
- চটজলদি মুখের দূর্গন্ধ ঢাকতে ব্যাগে রাখুন টুথব্রাশ, মাউথ ওয়াশ স্প্রে।
- ফলমূল, শাকসবজি, দইজাতীয় খাবার খেতে হবে।
- পাতিলেবু, কমলা, কামরাংগা, আনারসের শরবত পান করতে হবে।
- গাজর, শসা, টমেটো, আমড়া ও আমলকি খেতে হবে।
- মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
- মেনথল গাম ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেতে হবে।
- মুখ পরিষ্কার করার সময় জিহ্বার গোড়াটাও পরিষ্কার করতে হবে।
- খাওয়ার পর এক চামচ মৌরি খান, এছাড়াও এক কাপ উষ্ণ গরম জলে যদি মৌরী ভিজিয়ে খান, তাহলে ভালো হজম হবে এবং মুখের দূর্গন্ধ থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।
- এক কাপ জলের মধ্যে এক চামচ দারচিনি গুঁড়ো ফুটিয়এ নিয়ে সেই জল দিয়ে দিনে দুবার মুখ ধুয়ে নিলেও উপকার পাওয়া যাবে।
- এক কাপ জলে এক চা চামচ মেথি দিয়ে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল খেলে, মুখের দূর্গন্ধ নিমেষেই দূর হয়ে যাবে।
- মুখের মধ্যে লবঙ্গ দিয়ে চিবোতে থাকলে, কিংবা এক কাপ জলে এক চা চামচ লবঙ্গ দিয়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিট ফুটিয়ে সেই জল পান করলেও সমস্যার সমাধান হবে।
- খাবার খাওয়ার এক গ্লাস জলে এক টেবিল চামচ ভিনিগার মিশিয়ে খান মুখের দূর্গন্ধ দূর হবে।
- বেকিং সোডা দিয়ে দাঁত মাজুন কিংবা এক গ্লাসে গরম জলে বেকিং সোডা মিশিয়ে কুলকুচি করুন।
- টুথপেস্টের সঙ্গে টি ট্রি অয়েল, পেপারমিন্ট অয়েল বা লেমন অয়েল মিশিয়ে দাঁত মাজুন উপকার পাবেন।
- হার্বাল চা খেলেও মুখের দূর্গন্ধ নিমেষেই দূর হবে।
- মুখে দূর্গন্ধ হলেই আগে হাতিয়ার করুন জলকে। প্রথমে জল দিয়ে কুলকুচি করুন। এরপর একগ্লাস জল খান তাহলেই চলে যাবে মুখের দূর্গন্ধ।
- প্রচুর পরিমাণে আপেল খান।
- গ্রিন টি এ প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাবনয়েড থাকে, যা ব্যকটেরিয়াকে বিনাশ করে। তাই গ্রিন টি খেলেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
- নিয়ম করে দুই বেলা দাঁত মাজতে হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে আঙুল দিয়ে দাঁত মাজুন, পরে ব্রেকফাস্ট করে ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজুন।
- বছরে একবার স্কেলিং করে দাঁত পরিষ্কার করুন, এতে দাঁত ভালো থাকবে।
- খাবার পর গরম জলে নুন কিংবা ফটকিরি দিয়ে কুলকুচি করুন।
- মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন, তবে সাবধান বেশি ব্যবহার করলে ছত্রাক জন্মাবে।
- রোজ সকালে নারকেল তেল মুখের ভিতর দিয়ে আঙুল দিয়ে মালিশ করুন, তারপর জল দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন।
- আধা চামচ শুকনো ধনে এবং মৌরি নিয়ে দিনে তিনবার চিবিয়ে নিন।
- হাফ চা চামচ লবণের সঙ্গে দুই থেকে তিন ফোঁটা সরিষার তেল মিশিয়ে মাড়িতে এবং দাঁতে হালকা ভাবে ম্যাসাজ করুন।
- ডালিমের খোসা জলে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল দিয়ে কুলকুচি করুন।
- পেয়ারা পাতা চিবিয়ে খান কিংবা পেয়ারা পাতা সিদ্ধ করে এই জল দিয়ে কুলকুচি করুন।
- ইলাইচি বীজ চিবিয়ে খেলে কিংবা ইলাইচি পাউডার গরম জলে দিয়ে গার্গল করুন।
- তুলসি পাতার গুঁড়া দাঁত মাজুন কিংবা তুলসী পাতা চিবিয়ে খান।
- পান পাতা চিবিয়ে খান।
- খাবার খাওয়ার ৩০-৬০ মিনিট পর ব্রাশ করতে হবে।
- মুখ শুকনো রাখা যাবেনা, মুখে লালা থাকতেই হবে। আর তাই প্রচুর পরিমাণে জল খেতে হবে। কারণ মুখে লালা না থাকায় মুখের দূর্গন্ধ হয়।
- পাতি লেবু ব্যবহার করে, সেই লেবুর খোসা নিয়ে দাঁতে ঘষুন, এছাড়াও ওই খোসা গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে সেই জল দিয়ে কুলকুচি করুন।