ইন্টারনেট এর দুনিয়ায় ইউটিউব ভিডিও শেয়ারিং ও ইনকামের এর দিক দিয়ে বহুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদি আপনি আপনার প্যাশন কে ফুল টাইম ক্যারিয়ারে নিয়ে গিয়ে বেশ কিছু অর্থ উপার্জন করতে চান তাহলে, ইউটিউব ই আপনাকে তার সুযোগ করে দেবে। এই প্রতিবেদনে আমরা
ইউটিউব থেকে ইনকামের ১০ টি সহজ উপায় জানতে চলেছি। আপনি এই ফিল্ডে একজন নতুন হন কিংবা অভিজ্ঞ এই উপায় গুলি জানা থাকলে আপনি আপনার
ইউটিউব ক্যারিয়ারে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করার সুযোগ পাবেন। তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন দেখে নেওয়া যাক ইউটিউব থেকে
ইনকাম করার সেরা ১০ কৌশল।
১. গুগল অ্যাডসেন্স
ইউটিউব থেকে ইনকাম করার সবচেয়ে সাধারণ যে উপায় টি রয়েছে যার সম্পর্কে আমরা প্রায় সকলে অবগত, সেটি হল গুগল অ্যাডসেন্স এর অ্যাড রেভিনিউ। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে আপনার ভিডিও গুলিতে মনিটাইজেশন অন করে দিলে, আপনার ভিডিওর শুরুর আগে, মাঝখানে, কিংবা শেষে অ্যাডস প্লে হতে থাকে। আপনার ভিডিওতে যত বেশি ভিউ আসবে, অ্যাড দেখানোর পরিমাণ ও তত বৃদ্ধি পাবে এবং সেই পরিমাণ অ্যাড রেভিনিউ বা ইনকাম আপনি করতে পারবেন। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত হতে হলে আপনাকে ১০০০ ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম কমপ্লিট করতে হবে। তার পরেই আপনি ইউটিউব থেকে অ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ইউটিউবে আয় করার আরও একটি ভালো উপায় হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টস ও সার্ভিস গুলি আপনার ভিডিওর ডেসক্রিপশন এ লিঙ্ক করে দিতে পারেন। আপনার দর্শকেরা যখন আপনার ভিডিওর ডেসক্রিপশন এর লিঙ্ক গুলিতে ক্লিক করে ওই নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট গুলি কিনবেন তখন আপনি কিছু পরিমাণ কমিশন উপার্জন করতে পারবেন। তবে হাবিজাবি প্রোডাক্ট এর লিঙ্ক না দিয়ে যদি আপনি আপনার চ্যানেলের ক্যাটাগরি সম্পর্কিত প্রোডাক্ট এর লিঙ্ক দেন তাহলে অপেক্ষাকৃত বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
৩. স্পন্সর কন্টেন্ট
স্পন্সর কন্টেন্ট হল কোন কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের সাথে যুক্ত হয়ে তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস গুলি ভিডিও আকারে নিজের চ্যানেলে দেখানো। আপনার যদি সাবস্ক্রাইবার বেশি থাকে তাহলে এর বদলে আপনি মোটা অঙ্কের টাকা অথবা ফ্রি প্রোডাক্টস পেতে পারেন ওই কোম্পানি বা ব্র্যান্ড গুলির কাছ থেকে। আপনি আপনার ভিডিও তে যে স্পন্সর কন্টেন্ট দিচ্ছেন সেটি আপনার সাবস্ক্রাইবার দের বলুন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন যাতে ভুলভাল স্পন্সর করে সাবস্ক্রাইবার দের ক্ষতি না করে এমন ধরনের কন্টেন্ট স্পন্সর করুন যেগুলি আপনার চ্যানেলের মান্যতা বজায় রাখে।
৪. পণ্য বিক্রয় (Merchandise Sales)
ইউটিউবে ভিডিওর মাধ্যমে আপনি যদি একটা ভালো ফ্যান বেস গড়ে নিতে পারেন তাহলে আপনার চ্যানেল সম্পর্কিত পণ্য বিক্রয় করতে পারবেন। কাস্টম ডিজাইন টি শার্ট, হুডি, টুপি, এবং অন্যান্য প্রোডাক্ট সেল করতে পারবেন। টিস্প্রিং অথবা স্প্রেডশার্ট এর মতো প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ডিজাইন ও সেল করতে পারবেন কোন আগাম খরচ ছাড়াই। মনে রাখবেন আপনার ডিজাইন গুলি যেন আকর্ষণীয় ও উচ্চমানের হয় যা আপনার ব্র্যান্ড বা চ্যানেল কে প্রতিফলিত করে এবং দর্শক দের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।
৫. চ্যানেল মেম্বারশিপ
চ্যানেল মেম্বারশিপ এর মাধ্যমে আপনি আপনার মেম্বারদের কে সাধারণ সাবস্ক্রাইবার দের থেকে কিছু অতিরিক্ত সুবিধা দিতে পারেন। যার বিনিময়ে আপনি আপনার মেম্বার দের দের কাছ থেকে মাসে মাসে পেমেন্ট পাবেন। আপনি আপনার প্রিমিয়াম মেম্বার দের কন্টেন্ট, লাইভ চ্যাট, কাস্টম ব্যাজ, সাধারণ সময়ের আগে ভিডিও প্রদর্শন ইত্যাদি সার্ভিস গুলি দিতে পারেন। এই চ্যানেল মেম্বারশিপ এর অপশন টি পেতে গেলে আপনার চ্যানেলে নুন্যতম ৩০ হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে ।
৬. ক্রাউডফান্ডিং
আপনার যদি একটি উৎসাহী ফ্যান বেস থাকে তাহলে ক্রাউডফান্ডিং একটি কার্যকরী বিকল্প হতে পারে। Patreon কিংবা Kickstarter - এর মতো প্ল্যাটফর্ম গুলি হল আপনার দর্শক দের আপনার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার একটি মাধ্যম। এর বিনিময়ে আপনি আপনার সাবস্ক্রাইবার দের কিছু রিওয়ার্ডস কিংবা স্পেশাল গিফট বা কোন পেইড সার্ভিস এর স্পেশাল ছাড় দিতে পারেন। ক্রাউডফান্ডিং হল ইউটিউব থেকে আয়ের একটি স্থির উৎস যা আপনাকে আরও ভালো ও নতুন কন্টেন্ট তৈরি করার মোটিভেশন দেয়।
৭. লাইসেন্সিং ও কন্টেন্ট সেলস
আপনি যদি ইউনিক ও অরিজিনাল কন্টেন্ট যেমন স্টক ফুটেজ, মিউজিক, ভিডিও ইত্যাদি তৈরি করেন তাহলে আপনার কন্টেন্ট এর লাইসেন্স করে নিন এবং অন্যান্য মিডিয়ায় ব্যাবহার করুন অথবা বিক্রয় করুন। বিভিন্ন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, বিজনেস অথবা ফিল্মমেকার দের আপনার কন্টেন্ট বিক্রি করতে পারেন Shutterstock, Pond5 এই ধরনের প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে। আপনার কন্টেন্ট এর কপিরাইট করে নিতে ভুলবেন না।
৮. পাবলিক স্পিকিং ও ওয়ার্ক শপ
আপনি যদি আপনার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে আপনারই ফিল্ডে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। তাহলে আপনি পাবলিক স্পিকিং কিংবা ওয়ার্কশপ করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। অনেক সংস্থা রয়েছে যারা সংশ্লিষ্ট জ্ঞানী বক্তা দের সন্ধান করেন বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। আপনি আপনার নিজস্ব ওয়েবিনার বা ওয়ার্কশপ করতে পারেন। অংশ গ্রহণ কারী দের থেকে কিছু প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করুন।
৯. ইউটিউব প্রিমিয়াম রেভিনিউ
আপনার ইউটিউব চ্যানেলে যদি যথেষ্ট সাবস্ক্রাইবার থাকে আপনি ইউটিউব প্রিমিয়াম এর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। ইউটিউব প্রিমিয়াম হল এমন একটি সার্ভিস যা ইউজার রা কিছু পরিমাণ অর্থ সাবস্ক্রিপশন এর মাধ্যমে দিয়ে থাকেন যার বিনিময়ে তারা অ্যাড ফ্রি ভিডিও দেখার সুবিধা পান। ইউটিউব প্রিমিয়াম ব্যাবহার কারীরা যদি আপনার ভিডিও দেখে তখন তাদের সাবস্ক্রিপশন ফিজ এর কিছু পরিমাণ অর্থ আপনি পাবেন। এক্ষেত্রে যত বেশিক্ষণ সময় ধরে ইউজার রা আপনার ভিডিও দেখবে তত বেশি পরিমাণ অর্থ আপনি পাবেন। ইউটিউব প্রিমিয়াম এর মাধ্যমে সর্বাধিক উপার্জন করতে আকর্ষণীয় ও দীর্ঘ ভিডিও তৈরিতে মনোযোগ দিন।
১০. ইউটিউব শর্টস ফান্ড
আপনি যদি ইউটিউব শর্টস ফান্ড থেকে টাকা ইনকাম করতে চান তাহলে প্রথমেই আপনাকে যেটা মাথায় রাখতে হবে সেটা হল আপনার তৈরি করা ভিডিওটি পোট্রেট ফরম্যাট এবং ৬০ সেকেন্ড এর কম সময়ের হতে হবে। এই ভিডিও গুলি আপনি আপনার পছন্দের যেকোনো বিষয়ের উপরে বানাতে পারেন যেমন কোনো মজার মুহূর্ত, ফ্যাক্টস, টিউটোরিয়ালস, রেসিপি ইত্যাদি। শর্ট ফান্ড পেতে গেলে আপনাকে এটা মনে রাখতে হবে যেন আপনার ভিডিওটি অরিজিনাল হয়। কারোর ভিডিও থেকে ক্লিপ কেটে আপলোড করলে কিন্তু এই শর্ট ফাণ্ড আপনি পাবেন না। ইউটিউব শর্ট ফান্ড এর কোন নির্দিষ্ট পরিমাপ নেই। আপনার ভিডিওটি যদি ভীষণ ভাইরাল হয় তখনি আপনি এই ফান্ড পেতে পারেন।
শেষ কথা
ইউটিউব আপনার প্যাশন কে একটি লাভজনক কর্মজীবনে রূপান্তরিত করার সুযোগ করে দেয়। উপরের যেকোনো মাধ্যমেই হোক না কেন আপনার চ্যানেলের জন্য ইনকামের সঠিক উপায় কোনটি সেটি আপনাকেই বেছে নিতে হবে। ইউটিউব থেকে বেশি পরিমাণ ইনকাম করতে সর্বদা ধারাবাহিক ভাবে, ভালো ও আকর্ষণীয় কন্টেন্ট দেওয়া টা অতি আবশ্যক।
আশা করি আমাদের দেওয়া তথ্য থেকে ইউটিউব থেকে ইনকাম করার সেরা ১০ উপায় গুলি জানতে পেরেছেন। আরও এরকম জানা অজানা তথ্য পেতে BongHood এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।